শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭.পৌষ.১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ৯ জানুয়ারি ২০২৪

দুই চারটা দল অংশগ্রহণ না করলে কিছু আসে যায় না: শেখ হাসিনা

দুই চারটা দল অংশগ্রহণ না করলে কিছু আসে যায় না: শেখ হাসিনা
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী, সংগৃহীত

জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা ইতিহাসে ‘স্বর্ণাক্ষরে’ লেখা থাকবে। তিনি বলেন, এত দলের মধ্যে দুই চারটা দল অংশগ্রহণ না করলে কিছু আসে যায় না।

মঙ্গলবার গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মুষ্টিমেয় খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল ছাড়া এদেশে সকল মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়েছে। জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে।

“এত দলের মধ্যে দুই চারটা দল অংশগ্রহণ না করলে কিছু আসে যায় না। জনগণ অংশগ্রহণ করেছে সেটাই সব থেকে বড়। এ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণে অংশগ্রহণ করেছে। ১২০ বছরের বয়স্ক বুড়ো মানুষও ভোট দিতে গেছে। এর থেকে বড় কথা আর কি হতে পারে।”

দশম সংসদ নির্বাচনের মত এবারও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ভোট বর্জন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ২৮টি দল ৭ জানুয়ারি ভোটে অংশ নেয়। তাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অত্যন্ত কঠোরভাবে শৃঙ্খলা রক্ষা করে তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছেন। সুশৃংখল নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন, নির্বাচন পরিচালনার সাথে যারা জড়িত, সকলকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন।

“এ ধরনের চমৎকার নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সকলকে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই, আমি জানি, তাদের নেতাকর্মীরা এখন হতাশায় ভোগে।”

ভোট বর্জনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হতাশার কিছু নেই, আপনারা তো এ দেশেরই জনগণ। হয়ত আপনাদের ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, ডিজিটালের সুবাদেই ওহি নাজিল হয়। নিজেরা লন্ডনে বসে আয়েস করে পায়েস খায়, আর এখানে কর্মীদের মাঠে নামায়। মাঠে নামায় আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াতে।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “৭৫ এর পর নির্বাচন মানে কি আমি দেখেছি, নির্বাচন মানে ছিল নামেই নির্বাচন। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি, ভোটার লিস্টের মিথ্যা নাম দেওয়া, আর সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লংঘন করে যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের পকেট থেকে রাজনৈতিক দল বের হত।

“ওই দল মাটি মানুষের কথা বলে গঠিত না। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে গঠিত রাজনৈতিক দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই দল না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছিল না, তখনই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, জনগণের অধিকার রক্ষায় আওয়ামী লীগের সৃষ্টি।”

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “সৃষ্টির লগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের স্বার্থে কাজ করে গেছে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য বারবার অনেকেই এসেছে, আইয়ুব খানও চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খানও চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে। জিয়াউর রহমান যেমন হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সেভাবে খালেদা জিয়াও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী না, এদেশের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ আজকে তাদের (বিএনপি) দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। একটা মানুষের মধ্যে মনুষত্ব থাকলে কোনোদিন এভাবে পুড়িয়ে মারতে পারে না।”

বিএনপির ভোট বর্জনের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভেবেছিল একেবারে ক্ষমতা চলে যাবে, নির্বাচনে মাত্র ৩০টা সিট পেয়েছে। এরপর থেকে তারা জানে, বাংলাদেশের মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মানুষ হত্যা এগুলো পছন্দ করে না। তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। যে কারণে তারা কোনো নির্বাচনে আসতে চায়নি।”

বাংলাদেশের মানুষ কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৯৬ সালে খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, শত চেষ্টা করেও ভোটার আনতে পারে নাই। তারপর সিল মেরে, বাক্স ভরে সবকিছু করেছিল, সারা জায়গায় আর্মি নামিয়েছিল, পুলিশ নামিয়েছিল, সব নামিয়েছিল। তারপরও সে নির্বাচন হয়নি এবং জনগণ মেনে নেয়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল, ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ভোটচুরির অপরাধ নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল।”

সে কথা জনগণ ভুলে যায়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৬ সালের নির্বাচনেও এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে এ নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সেই নির্বাচনও টিকাতে পারে নাই। ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ার হয়, খালেদা জিয়ও যায়, তার নির্বাচনও যায়। এদের তাও শিক্ষা হয় না, লজ্জা হয় না।”

সুত্র বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম