বাম জোটের নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। গতকাল বৃহস্পতিবার পুরানা পল্টন্থ সিপিবি কার্যালয়ে আয়োজিক এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানান জোটের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, সরকার রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পথ বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের পথে হাটছেন। এই নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ এর ধারায় নতুন ধরনের প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমি, ডামি, স্বতন্ত্র, সরকারের আনুকূল্যের বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা জিততে ও সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কিছু প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সরকার, প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রকাশ্যে নির্লজ্জ ভূমিকা নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের মনে নতুন নতুন কৌতুকের সৃষ্টি করে চলেছে। নির্বাচনে কে ক্ষমতায় যাবে এটি এখন আর আলোচ্য বিষয় নয়। এক ব্যক্তি, একই জায়গায় থেকে নিজদল, স্বতন্ত্র, ১৪ দলের শরীক দল, মিত্র দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সবাইকে মনোনয়ন দিচ্ছে। ফলে এখন আলোচ্য বিষয় হলো কাদের করা হবে বিরোধী দল।
এই প্রহসনের একদলীয় ‘আমি আর ডামি’র নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত-সংঘর্ষ, দমন-পীড়ন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা জনমনে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ৭ জানুয়ারির পরবর্তীতে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট যে গভীর খাদে নিমজ্জিত হবে তা মোকাবিলা করা দু:সাধ্য হয়ে পড়বে। বিদেশি সাম্রাজ্যাদী আধিপত্যবাদী শক্তির অপতৎপরতা আরও বাড়বে। যা দেশকে আরও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলবে।
সংবাদ সম্মেলনে,.এ অবস্থার উত্তরণে ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিল, সংবিধানেই যে সুযোগ রয়েছে সে অনুযায়ী বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে সকল দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করে নতুন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, "এই প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের নির্লজ্জ প্রহসনের কলঙ্কের ভাগিদার হওয়া থেকে বিরত থাকুন, জনগণের আকাঙ্খার বিপরীতে অবস্থান নেবেন না, সময় থাকতে নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করুন"।
সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, গণাদবি ও জনমত উপেক্ষা করে সরকার একতরফা প্রহসনের যে নির্বাচন সংগঠিত করতে যাচ্ছে ঐ নির্বাচন নিজে বর্জন করুন, অন্যকেও বর্জন করতে বলুন। এই নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়," মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করে। তাই নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী মত দমনের পথ থেকে সরে আসুন। দমন-পীড়ন, সংঘাত বন্ধ করুন। দল-মত-নির্বিশেষে সবার মত প্রকাশ ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে দয়িত্ব পালন করুন"।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী প্রমুখ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার গণদাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করলে ৭ তারিখের পরও আন্দোলনের জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।