মুখোমুখি আন্দোলনকারী-ক্ষমতাসীনরা, সংঘর্ষে নিহত ১০
পুর্বঘোষিত বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন দেশের বিভিন্নস্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে ২ জন, মাগুরায় একজন, পাবনায় ৩ জন, রংপুরে ২ জন, সিরাজগঞ্জে একজন ও বরিশালে একজন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীও রয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রবিবার মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল।
মাগুরা:
মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। রবিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রংপুর:
রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।
পাবনা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। এসময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। তাদের সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা সদর হাসপাতাল সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জ :
সিরাজগঞ্জে শহরের সবগুলো রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিক সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এদিন সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এছাড়াও ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটলে পুরো শহর দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্র ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসা, আওয়ামী নেতা বিমল কুমার দাসের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়াও জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. রতন কুমার জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ।
বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।