শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭.পৌষ.১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

তীব্র শীতে রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা

তীব্র শীতে রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা
ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ডেকে দিচ্ছে কৃষকরা, সংগৃহীত

দেশে কয়েকদিন ধরে তীব্র শীত পড়েছে। ১৬টির মতো জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে। জমিতেই ঝরে পড়ছে সরিষার ফুল। একইসঙ্গে রবিশস্যের মধ্যে শাকসবজি, পেঁয়াজ, ডালসহ অন্যান্য রবিশস্যে কোল্ড ইনজুরি ও পোকার আক্রমণ হচ্ছে। এই অবস্থায় কৃষকরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। এদিকে, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় চারটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এই সময় বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, আলু, টমেটো, বেগুন, শিমের চাষাবাদ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয়-বোরো ধানের বীজতলা করা হচ্ছে। পেঁয়াজ আবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশায় এগুলো সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে।

ফুলকপি-বাঁধাকপি ও ব্রকলি শীতকালীন সবজি হলেও প্র্রচণ্ড ঠান্ডা ও কুয়াশায় নষ্ট হতে পারে। তাই অনুজীব ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আলু ও টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম নাবিদশা রোগ। এই পরিস্থিতিতে কৃষক বিকালের দিকে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। শিমে একধরনের মরিচা রোগ হয়। এমন আবহাওয়ায় এই রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

তিনি জানান, বোরো ধানের চারার জন্য এমন আবহাওয়া অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে কোল্ড ইনজুরি হয়ে চাড়া অনেক সময় মরে যায়। ঝলসে যায়। তাই চারা রাতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। দিনে পলিথিন সরিয়ে রাখতে হবে। চারায় সব সময় মাটির নিচ থেকে তোলা পানি ব্যবহার করতে হবে। পুকুর থেকে পানি দেওয়া যাবে না।

কারণ, পুকুরের পানি অনেক ঠান্ডা। এতে চারার আরও ক্ষতি হয়। তাছাড়া প্রচণ্ড কুয়াশায় সরিষা পাতা ঝলসে এবং ফুল ঝড়ে যায়। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে পাতা পচে যায়। এমনটা হলে কৃষককে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই প্রতিকার হিসাবে এখন থেকেই ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

কথা হয় ঝালকাঠি সদর উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের কৃষক হাবিবুল্লাহর সঙ্গে। তিনি শনিবার ফোনালাপে যুগান্তরকে বলেন, ঝালকাঠিতে তীব্র শীতের সঙ্গে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় শীতকালীন শাকসবজি ও ফসলে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। এছাড়া পান হলদে হয়ে ঝরে যাচ্ছে। শীতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বোরো রোপণে বিলম্ব হচ্ছে। এতে আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পানের ক্ষতি হলে পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যেতে হবে। তাছাড়া বোরো চাষ করার সাহস পাচ্ছি না। যে পরিমাণ শীত পড়ছে, এতে একটু দেরিতে বীজতলা তৈরি করতে 

কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. গোলাম মওলা বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে কুয়াশা থাকায় রবি ফসলের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। শীত ও কুয়াশা চলমান থাকলে শীতকালীন শাকসবজি ও রোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আগাম জাতের আম গাছে আসা মুকুল ঝরে যেতে পারে। সব মিলে ফসল রক্ষায় এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা নিলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলমান শীত পরিস্থিতি নিয়ে এখনো কোনো ধরনের সুখবর নেই। অন্তত আরও ৪-৫ দিন মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ফসল রক্ষায় চার ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় ফসলের বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা দিনরাত ঢেকে রাখতে হবে, তবে খেয়াল করতে হবে চারার পাতা যাতে পলিথিন স্পর্শ না করে। পাশাপাশি ঢেকে রাখা বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে, সঙ্গে চারার ওপর জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। আর প্রতি দশ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম থিওভিট অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করতে হবে।

শনিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে তীব্র শীত ও কুয়াশায় ফসলের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলায় মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। পাতা ঝরে যাওয়া রোধ, সবজি ও ফসলের পোকা আক্রামণ ঠেকাতে কৃষককে নানা রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শীত-কুয়াশায় বীজতলায় যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ফসল নষ্টের আশঙ্কা নেই।