সাকরাইন উৎসব কাল, প্রস্তুত পুরান ঢাকা
আগামীকাল রাজধানীতে সাকরাইন উৎসব। প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তিতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার ছোট-বড় সবাই মেতে ওঠে এ উৎসবে। পুরান ঢাকার আকাশে ছেয়ে নানা রঙের ঘুড়িতে। উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার সব অলিগলিতে ঘুড়ি বেচাকেনায় ধুম পড়েছে। উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও বহু বছর ধরে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। এই উৎসবকে ‘পৌষ সংক্রান্তি’ বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়ে থাকে।
সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ মাসের শেষ দিনে এই সাকরাইন উৎসব আয়োজন করা হয়। তবে বাংলা ক্যালেন্ডার ও পঞ্জিকা তারিখের সঙ্গে কিছুটা পার্থক্যের কারণে প্রতি বছর দুই দিনব্যাপী এই উৎসবটি পালন করেন পুরান ঢাকা বাসিন্দারা।
শনিবার সকালে পুরান ঢাকার নারিন্দা, লক্ষ্মীবাজার, ওয়ারী, সূত্রাপুর ও শাঁখারীবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়ির অস্থায়ী দোকান বসেছে। স্থায়ী দোকানগুলো তো আছেই। এর পাশাপাশি অলিগলি ও প্রধান সড়কের পাশে ফুটপাতেও বিক্রেতারা নানা রঙের ঘুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এবার সাকরাইনের আগে ঘুড়ির বেচাকেনা বেশ ভালো বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
বিক্রেতারা জানালেন, প্রতিবছরের মতো এবারও চশমাদার, কাউটাদার, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, বোয়াদার, পান, চ্যাপলা, নৌকা, ঈগল, সাদা ঘুড়ি, চারবোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভ ঘুড়ি, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুর, চিল, অ্যাংরি বার্ডসহ নানা নামের ঘুড়ি এসেছে। সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা ও নাটাই।
শাঁখারীবাজারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ ঘুড়ি প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায়। বিদেশি ও নকশা করা ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়। একেকটি নাটাই মানভেদে ১৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেল। মাঞ্জা দেওয়া সুতা মানভেদে ৬০ টাকা থেকে ২ হাজার
সাকরাইনের প্রধান আকর্ষণ ঘুড়ি খেলা। সাকরাইনে ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর ছাদ থেকে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ঘুড়িতে। আর সন্ধ্যার পর শুরু হয় আতশবাজি, আগুনের খেলা। শত শত ঘুড়ি উড়ানো দেখতে ঢাকার অন্য অঞ্চল থেকেও হাজারো মানুষ ভিড় জমান ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবটির এলাকা পুরান ঢাকায়।
শুধু ঘুড়ি ওড়ানোই নয়, ঘুড়ি কাটাকুটি খেলাও শুরু হয়ে যায়। রং-বেরঙের ঘুড়ি এক সঙ্গে উড়ে ঢাকার আকাশকে বর্ণিল করে তোলে। সন্ধ্যা নামলে খেলা শেষে শুরু হয় আতশবাজি, শত শত ফানুসে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ।
সঙ্গে থাকেন বিভিন্ন শিল্পী। গান গেয়ে, খেলা দেখিয়ে তারা দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিভিন্ন পিঠাপুলিসহ নতুন খাবার। নানা রকম খাবারের পাশাপাশি ছাদে চলতে থাকে আড্ডা ও নাচ-গান।